উদ্ভিদকোষ এর আদ্যোপান্ত!

April 2, 2024 ...

এইযে মানুষ, উদ্ভিদ, পশুপাখি, এতো এতো জীবন ঘুড়ে বেড়াচ্ছে আমাদের আশেপাশে কখনো ভেবেছো এসবকিছুর গাঠনিক উপাদান কী? কিভাবে ছোট্ট একটি হাতি ধীরে ধীরে দানব আকৃতিতে রুপান্তরিত হয়? কী দিয়ে তৈরি আমাদের শরীর? এসব প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে কোষ। আমাদের শরীর লক্ষ লক্ষ কোষের সমন্বয়ে গঠিত হয়। শুধু প্রাণি নয়, বরং উদ্ভিদও গঠিত হয় এমন লক্ষাধিক কোষের সমন্বয়ে। আজকের এই ব্লগটিতে আমরা জানবো উদ্ভিদকোষ সম্পর্কে বিস্তারিত। 

উদ্ভিদকোষ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে কোষ সম্পর্কে। তোমরা কি জানো কোষ কাকে বলে? 

 

কোষ কাকে বলে? 

কোষ হলো জীবনের মৌলিক কাঠামো বা একক। এটি জীবদেহের ক্ষুদ্রতম একক। ব্যাক্টেরিয়া থেকে শুরু করে মানব শরীর সবই কোষ দিয়ে গঠিত। যেখানে ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে এককোষী এবং মানুষ হচ্ছে বহুকোষী। 

কোষ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ সেল (cell)। সেল শব্দটি ল্যাটিন শব্দ সেলুলা থেকে এসেছে যার অর্থ একটি ছোট্ট কক্ষ বা কুঠুরি। এই নামটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী রবার্ট হুক। 

কোষ দুই ধরনের হয়ে থাকে।

  • প্রাণিকোষ
  • উদ্ভিদকোষ

 

প্রাণিকোষ কাকে বলে?

প্রাণিদেহের গাঠনিক ও ক্ষুদ্রতম একক যা প্রাণিদেহের বিকাশ ও জীবনধারণে ভূমিকা পালন করে তাকে প্রাণিকোষ বলে। 

আজকের এই ব্লগটিতে আমরা প্রাণিকোষ নিয়ে আলোচনা করবো না। আলোচনা করবো উদ্ভিদকোষ নিয়ে! চলো শুরুতে জেনে নেই উদ্ভিদকোষ কাকে বলে! 

 

উদ্ভিদকোষ কাকে বলে? 

উদ্ভিদকোষ হলো উদ্ভিদের গাঠনিক ক্ষুদ্রতম একক যা উদ্ভিদের ক্রিয়া, বিকাশ ও জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদকোষ সাধারণত ইউক্যারিওটিক কোষ। তোমরা কি জানো ইউক্যারিওটিক কোষ কোন কোষগুলোকে বলে থাকি আমরা? 

সাধারণত কোষ নিউক্লিয়াসের ভিত্তিতে দুইধরনের হয়ে থাকে। 

  • আদিকোষ বা প্রাককেন্দ্রিক কোষঃ এ ধরনের কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না। এদের নিউক্লিয়াসে কোনো পর্দা থাকে না বিধায় নিউক্লিওতন্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। 
  • প্রকৃতকোষ বা ইউক্যারিওটিক কোষঃ এসব কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে। নিউক্লিয়াসের বাহিরে পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। 

 

উদ্ভিদকোষ এর চিত্র

চিত্র 1

 

উদ্ভিদকোষ এর গঠন

একটি আদর্শ উদ্ভিদকোষে নিম্নোক্ত অঙ্গানুগুলো উপস্থিত থাকে। 

গঠন

 

কোষপ্রাচীর (Cell Wall) 

কোষপ্রাচীর উদ্ভিদকোষের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এটি মৃত এবং জড়বস্তু দিয়ে তৈরি। প্রাণীকোষে কিন্তু কোষপ্রাচীর থাকে না। 

একটি উদ্ভিদকোষের প্রাচীরে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যেমন-

  • সেলুলোজ
  • হেমিসেলুলোজ
  • লিগনিন
  • পেকটিন 
  • সুবেরিন, ইত্যাদি। 

 

কোষপ্রাচীর এর গঠন

উদ্ভিদকোষের কোষপ্রাচীর মূলত নিম্নোক্ত জিনিসগুলো নিয়ে গঠিত। 

 

মধ্যপর্দা (Middle Lamella)

একটি বিকশিত কোষ প্রাচীরকে (Cell Wall) প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত দেখা যায়। এর প্রথম স্তরটি হলো মধ্যপর্দা (middle lamella)। মাইটোটিক কোষ বিভাজনের টেলোফেজ পর্যায়ে এর সূচনা ঘটে। 

 

প্রাথমিক প্রাচীর (Primary Wall) 

দ্বিতীয় স্তরটি হলো প্রাথমিক প্রাচীর (primary wall)। মধ্যপর্দার ওপর সেলুলোজ (cellulose), হেমিসেলুলোজ (hemicellulose) এবং গ্লাইকোপ্রোটিন (glycoprotein) ইত্যাদি জমা হয়ে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে।

 

সেকেন্ডারি প্রাচীর (Secondary Wall)

দ্বিতীয় স্তরের ওপরের স্তরে সাধারণত সেলুলোজ এবং লিগনিন জমা হয়। এটি সেকেন্ডারি প্রাচীর (secondary wall) বা তৃতীয় স্তর।

 

টারশিয়ারি প্রাচীর (Tertiary Wall) 

বিরল ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি প্রাচীরের ভেতরের দিকে টারশিয়ারি প্রাচীর (tertiary wall) জমা হতে পারে।

 

প্লাজমোডেসমাটা (Plasmodesmata) 

দুটি পাশাপাশি কোষের প্রাচীরের সূক্ষ্ম ছিদ্র পথে নলাকার সাইটোপ্লাজমিক সংযোগ স্থাপিত হয়। একে প্লাজমোডেসমাটা (একবচন : প্লাজমোডেসমা) বলে। 

 

কোষপ্রাচীর এর রাসায়নিক গঠন

মধ্যপর্দায় অধিক পরিমাণে থাকে পেকটিক অ্যাসিড। এ ছাড়া অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম পেকটেট এবং ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট লবণ থাকে- যাকে পেকটিন বলা হয়। এ ছাড়াও অল্প পরিমাণে থাকে প্রোটোপেকটিন। প্রাথমিক প্রাচীরে থাকে প্রধানত সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং গ্লাইকোপ্রোটিন। হেমিসেলুলোজ-এ xylans, arabans, galactans ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পলিস্যাকারাইডস থাকে। 

 

পোস্টার প্রেজেন্টেশন সুপার কোর্স

কোর্সটি করে যা শিখবেন:

  • যেকোনো বিষয় এর উপর কিভাবে পোস্টার তৈরি করতে হয়
  • আত্মবিশ্বাসের সাথে কিভাবে পোস্টার প্রেজেন্ট করতে হয়
  • QnA Session-এ Smartly উত্তর দেওয়ার টিপস
  • গ্রুপ ওয়ার্ক হিসেবে পোস্টার প্রেজেন্ট করার হ্যাকস
  •  

    গ্লাইকোপ্রোটিনে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং অন্যান্য পদার্থ থাকে। Xyloglucan নামক হেমিসেলুলোজ প্রাচীর গঠনে ক্রসলিংক (cross-link) হিসেবে কাজ করে। অনেক সেকেন্ডারি প্রাচীরে লিগনিন (lignin) থাকে। কোনো কোনো প্রাচীরে সুবেরিন (suberin), ওয়াক্স ইত্যাদি থাকে। ছত্রাকের প্রাচীর কাইটিন এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রাচীর লিপিড-প্রোটিন পলিমার দিয়ে গঠিত।

     

    কোষপ্রাচীর (Cell Wall) এর কাজ

    • এটি কোষকে কাঠামোগত সমর্থন এবং সুরক্ষা উভয়ই প্রদান করে। 
    • কোষের আকার ও আকৃতি বজায় রাখা
    • পানি ও খনিজ লবণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে
    • পাশের কোষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে প্লাজমোডেজমাটা-এর সাহায্যে। 
    • এটি কোষের একটি ফিল্টারিং প্রক্রিয়া হিসাবেও কাজ করে।

     

    প্রোটোপ্লাজম (Protoplasm) 

    কোষের ভিতরে অর্ধস্বচ্ছ জেলির মতো একটি বস্তু থাকে যা হচ্ছে প্রোটোপ্লাজম। কোষঝিল্লি দিয়ে ঘেরা যা কিছু যা সব প্রোটোপ্লাজমের অংশ। এমনকি কোষঝিল্লিও প্রোটোপ্লাজমের অংশ। চলো দেখে নেই, কোষঝিল্লির মধ্যে কী কী অংঙ্গানু অবস্থিত! 

     

    কোষঝিল্লি 

    প্রোটোপ্লাজমের বাইরে দুই স্তর বিশিষ্ট যে স্তিতিস্থাপক পর্দা থাকে, তাকে কোষঝিল্লি বলে। এটি মূলত লিপিড ও প্রোটিন দ্বারা তৈরি। কোষঝিল্লি একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা হওয়ায় অভিস্রবণের মাধ্যমে পানি ও খণিজ লবণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাশাপাশি কোষগুলোকে আলাদা করে রাখে। 

     

    সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানু

    প্রোটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াস সরিয়ে নিলে যে জেলির মতো বস্তুটি থাকে তা হলো সাইটোপ্লাজম। সাইটোপ্লাজমের মধ্যে অনেক ধরনের অঙ্গানু থাকে। এই অঙ্গানুগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল। 

     

    মাইটোকনন্ড্রিয়া

    কোষের পাওয়ার হাউজ বলা হয় মাইটোকন্ড্রিয়াকে। এটি দুই স্তরবিশিষ্ট এবং ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা। চলো মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন সম্পর্কে জেনে নেই। 

    ১। আবরণী: প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ন লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ারের দুই স্তর নিয়ে গঠিত। 

    ২। প্রকোষ্ঠ: দুই মেমব্রেনের মাঝখানের ফাঁকা স্থানকে বলা হয় বহিস্থ কক্ষ (প্রকোষ্ঠ) বা আন্তঃমেমব্রেন ফাঁক এবং ভেতরের মেমব্রেন দিয়ে আবদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ। অভ্যন্তরীণ কক্ষ জেলির ন্যায় ঘন সমসত্ত্ব , পদার্থ বা ধাত্র দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই ধাত্র পদার্থকে ম্যাট্রিক্স বলে।

    ৩। ক্রিস্টি (Cristae) বা প্রবর্ধক: বাইরের মেমব্রেন সোজা কিন্তু ভেতরের মেমব্রেনটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি করে। প্রবর্ধিত অংশকে ক্রিস্টি (cristae) বলে। 

    ৪। অক্সিসোম (Oxisome): মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) অন্তঃআবরণীর অন্তর্গাত্রে অতি সূক্ষ্ম অসংখ্য দানা লেগে থাকে। এদের অক্সিসোম বলে।

    ৫। ATP-Synthases ও ETC: ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATP-Synthases নামক গোলাকার বস্তু আছে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়।

    ৬। বৃত্তাকার DNA ও রাইবোসোম: মাইটোকন্ড্রিয়ার (Mitochondria) নিজস্ব বৃত্তাকার DNA এবং রাইবোসোম (70 S) রয়েছে। 

     

    মাইটোকনন্ড্রিয়াকে কেন কোষের পাওয়ার হাউস বলা হয়?

    জীবের শ্বসনকার্যে সাহায্য করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ। তবে কীভাবে শ্বসনকার্যে সাহায্য করে? 

    উদ্ভিদের শ্বসনক্রিয়ার ধাপ হচ্ছে চারটি। 

    • গ্লাইকোলাইসিস
    • অ্যাসিটাইল কো এ সৃষ্টি
    • ক্রেবস চক্র
    • ইলেক্ট্রন প্রবাহ তন্ত্র

     

    এই চারটি ধাপের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ক্রেবস চক্র। এই ক্রেবস চক্রেই সবচেয়ে শক্তি উৎপাদিত হয়। আর এই চক্রের কাজ সম্পাদিত হয় মাইটোকন্ড্রিয়ায়। এজন্যই মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউস বা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বলে। 

     

    উদ্ভিদকোষে মাইটোকনন্ড্রিয়ার কাজ কী? 

    • কোষের যাবতীয় কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করা। 
    • শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম প্রভৃতি ধারণ করা। 
    • কোষের পূর্বনির্ধারিত মৃত্যু (apoptosis) প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।  
    • এরা Ca, K প্রভৃতি পদার্থের সক্রিয় পরিবহনে সক্ষম। 
    • শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন সম্পন্ন করা।

     

    প্লাস্টিড

    প্লাস্টিড উদ্ভিদকোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গানু। প্লাস্টিড উদ্ভিদকে খাদ্য প্রস্তুত, খাদ্য সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এইযে বিভিন্ন উদ্ভিদের ফুল, পাতা, ফল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে এটি প্লাস্টিডের জন্যই। 

    চলো জেনে নেই কীভাবে! 

     

    প্লাস্টিড কয় ধরনের? 

    প্লাস্টিড ৩ ধরনের হয়ে থাকে। 

    • ক্লোরোপ্লাস্টঃ সবুজ রঙের প্লাস্টিডকে বলা হয় ক্লোরোপ্লাস্ট। পাতা, কচি কান্ড ও অন্যান্য সবুজ অংশে এদের পাওয়া যায়। এই প্লাস্টিডে ক্লোরোফিল থাকে যার জন্য এদের সবুজ দেখায়। এছাড়া এতে ক্যারোটিনয়েড নামক রঞ্জক পদার্থও থাকে।

     

    • ক্রোমোপ্লাস্টঃ ক্রোমোপ্লাস্ট প্লাস্টিডে জ্যান্থফিল, ক্যারোটিন, ফাইকোএরিথ্রিন, ফাইকোসায়ানিন ইত্যাদি রঞ্জক পদার্থ থাকে, তাই কোনোটিকে হলুদ, কোনোটি নীল আবার কোনোটি লাল দেখায়। রঙিন ফুল পাতা, গাজরের মূলে এদের পাওয়া যায়। 

     

    • লিউকোপ্লাস্টঃ যেসব প্লাস্টিডে কোনো রঞ্জক পদার্থ থাকে না তাদের লিউকোপ্লাস্ট বলে। যেসব কোষে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেখানে লিউকোপ্লাস্ট প্লাস্টিড পাওয়া যায়। যেমনঃ মূল, ভ্রূণ, জননকোষ ইত্যাদি। তবে আলোর সংস্পর্শে আসলে লিউকোপ্লাস্ট পরিণত হয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট হতে পারে। 

     

    মুলা রঙহীন হলেও গাজর কেন লাল রঙের হয়?

    প্লাস্টিড সম্পর্কে তো জানলে। তোমাকে যদি এখন প্রশ্ন করা হয় যে মুলা রঙহীন হলেও গাজরের রঙ লাল কেন হয় বলতে পারবে? খুবই সহজ। গাজরে থাকে বিটাক্যারোটিন যা একটি ক্রোমোপ্লাস্টে । ক্যারোটিন হল সালোকসংশ্লেষী রঞ্জক যা অতিবেগুনি, বেগুনি এবং নীল আলো শোষণ করে এবং কমলা বা লাল আলো ছড়িয়ে দেয় তাই গাজর কমলা রঙের হয়। অন্যদিকে মুলাতে থাকে লিউকোপ্লাস্ট। অর্থ্যাৎ ক্যারোটিন নামক পদার্থ থাকে না। যার জন্য গাজর লাল রঙের হলেও মুলা রঙহীন হয়। 

     

    গলজি বস্তু

    প্রাণিকোষে মূলত গলজি বস্তু দেখা যায় তবে কিছু উদ্ভিদকোষেও গলজি বস্তু উপস্থিত আছে। ইতালীয় স্নায়ুবিজ্ঞানী ক্যামিলো গলজি ১৮৯৮ সালে পেঁচা ও বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে গলজি বস্তু আবিষ্কার করেন। গলজি বস্তুকে কোষের প্যাকেজিং কেন্দ্র বলে।

     

    গলজি বস্তুতে থাকে

    • সিস্টার্নি
    • কয়েক ধরনের ভেসিকল 

     

    গলজি বস্তুর কাজ

    • জীবকোষে বিভিন্ন পদার্থ নিঃসৃতকরণের সাথে এর সম্পর্ক
    • এরা কিছু বিপাকীয় কাজের সাথেও সম্পর্কিত
    • গলজি বস্তু প্রোটিন সঞ্চয় করে রাখে 
    • লাইসোজোম তৈরি করা
    • কোষস্থ পানি বের করা

     

    কোষের ট্রাফিক পুলিশ কাকে বলে?

    গলজি বস্তুকে “কোষের ট্র্যাফিক পুলিশ” বলা হয় কারণ গলজি বস্তু নিঃসৃত পদার্থের সংগ্রহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। 

     

    এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম 

    প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম সাহায্য করে। এর গায়ে রাইবোজোম লেগে থাকে যা প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজ করে থাকে। উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় কোষে এটি উপস্থিত থাকে।

    গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম (Endoplasmic Reticulum) তিন প্রকার; যথা : 

     

    (ক) সিস্টার্নি (Cisternae): এরা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা, শাখাবিহীন ও লম্বা চৌবাচ্চার মতো এবং সাইটোপ্লাজমে পরস্পর সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত থাকে। 

    (খ) ভেসিকল (Vesicles): এগুলো বর্তুলাকার ফোস্কার মতো।

    (গ) টিউবিউল (Tubules): এগুলো নালিকার মতো, শাখান্বিত বা অশাখ। এদের গায়ে সাধারণত রাইবোসোম যুক্ত থাকে না।

     

    এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর কাজ

    • প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে
    • লিপিড ও স্টেরয়েড সংশ্লেষণ করে।
    • বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণু সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
    • এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
    • অমসৃণ রেটিকুলামে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। 

    কোষগহ্বর 

    সাইটোপ্লাজমে কোষের মধ্যে যে আপাত ফাঁকা স্থান দেখা যায়, সেগুলো হচ্ছে কোষগহ্বর। প্রাণিকোষ ও উদ্ভিদকোষ উভয় স্থানেই উপস্থিত থাকলেও উদ্ভিদকোষের কোষগহ্বর আকারে বড় হয়ে থাকে। এর প্রধান কাজ হচ্ছে কোষরস ধারণ করা। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অজৈব লবণ, আমিষ, শর্করা, চর্বিজাতীয় পদার্থ, জৈব এসিড, পানি ইত্যাদি এই কোষরসে থাকে। 

     

    লাইসোজোম

    লাইসোজোম জীব কোষকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। যখনি কোনো জীবাণু ভিতরে প্রবেশ করে লাইসোজোম এর উৎসেচক জীবাণুগুলোকে হজম করে ফেলে। তবে এই পরিপাককারী উৎসেচকগুলো একটি পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকে, তাই অন্য কোনো অঙ্গানু এর সংস্পর্শে আসলেও হজম হয়না। 

    দেহে অক্সিজেনের অভাব হলে লাইসোজোমের পর্দা নষ্ট হয়ে যায়। তখন এর আশেপাশের  অঙ্গানুগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। 

     

    কোষকঙ্কাল 

    কোষঝিল্লির পরেই কোষকঙ্কাল এর অবস্থান। কোষকঙ্কাল ভিতর থেকে কোষটাকে ধরে রাখে। অ্যাকটিন, মায়োসিন, টিউবিউলিন ইত্যাদি প্রোটিন দিয়ে কোষকঙ্কালের বিভিন্ন ধরনের তন্তু নির্মিত হয়। 

     

    রাইবোজোম 

    এটি প্রাণী ও উদ্ভিদ, উভয় কোষে পাওয়া যায়। রাইবোজোমের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করা। 

     

    সেন্ট্রোজোম

    এটি মূলত প্রাণিকোষে পাওয়া যায় তবে নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদকোষে কদাচিৎ এদের দেখা যায়। সেন্ট্রোজোম ২টি অংশ নিয়ে গঠিত।

     

    সেন্ট্রিওল

    প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে দুটি ফাঁপা নলাকার বাঁ দন্ডাকার অঙ্গানু দেখা যায়, এদের সেন্ট্রিওল বলে। 

     

    সেন্ট্রোপ্লাজম

    সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাড় তরলকে সেন্ট্রোপ্লাজম বলে। সেন্ট্রোজোমে থাকা সেন্ট্রিওল কোষ বিভাজনের সময় অ্যাস্টার রে গঠন করে। 

     

    নিউক্লিয়াস

    এটি উদ্ভিদকোষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গানু। এর আকৃতি গোলাকার, ডিম্বাকার বাঁ নলাকার হতে পারে। নিউক্লিয়াসে বংশগতির বৈশিষ্ট্য নিহিত থাকে। চলো একটি আদর্শ নিউক্লিয়াসের গঠন জেনে নেই। 

     

    নিউক্লিয়ার ঝিল্লি 

    নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে এই ঝিল্লি। এটি দুইস্তর বিশিষ্ট। নিউক্লিয়ার ঝিল্লি লিপিড ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত এবং এটি সাইটোপ্লাজমের অন্যান্য অঙ্গানু থেকে নিউক্লিয়াসের অন্যান্য বস্তুকে পৃথক রাখে। এর গায়ে কিছু ছিদ্র থাকে যা নিউক্লিয়ার রন্ধ্র। এই ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াসের মধ্যে বিভিন্ন বস্তু চলাচল করে। 

     

    নিউক্লিওপ্লাজম 

    নিউক্লিয়ার ঝিল্লির ভিতরে জেলির মতো বস্তুকে বলে নিউক্লিওপ্লাজম। এতে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন, এনজাইম ও কতিপয় খণিজ পদার্থ থাকে। 

     

    নিউক্লিওলাস

    নিউক্লিওপ্লাজমের মধ্যে একটি গোলাকার বস্তু থাকে ক্রোমোজোমের সংলগ্ন অবস্থায়, একে নিউক্লিওলাস বলে। এরা RNA ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। এরা রাইবোজোম সংশ্লেষণ করে। 

     

    ক্রোমাটিন জালিকা

    কোষে যখন কোষ বিভাজন চলে না, তখন নিউক্লিয়াসে কুন্ডলী পাকানো সূক্ষ্ম সুতার মতো যে অংশটি দেখা যায় তা হচ্ছে ক্রোমাটিন জালিকা। ক্রোমোজোমে অবস্থিত থাকে জিন যা বংশগতির গুনাবলি বহন করে ও এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে নিয়ে যায়। কোনো একটি জীবে ক্রোমোজোমের সংখ্যা নির্দিষ্ট। 

     

    একটি ক্রোমোজোম সাধারণত নিম্নোক্ত জিনিস নিয়ে গঠিত হয়। 

    • স্যাটেলাইট
    • গৌণকুঞ্চন
    • ক্রোমোনেমাটা
    • সেন্ট্রোমিয়ার 
    • ধাত্র

     

    নতুনরূপে অনলাইন ব্যাচ ২০২৪ (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি)

    কোর্সটিতে যা যা পাচ্ছেন:

  • ৬টি বিষয়ের উপর ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাস
  • ডাউট সলভ ও প্রতিটি ক্লাসের লেকচার শীট
  • ডেইলি প্র্যাক্টিস ও উইকলি প্র্যাক্টিস
  • ডেমো অ্যাসাইনমেন্ট ক্লাস ও প্র্যাক্টিস
  • "

     

    উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষের মধ্যে পার্থক্য

     

    উদ্ভিদ কোষ প্রাণী কোষ
    ১। কোষপ্রাচীর থাকে। ১। কোষপ্রাচীর থাকেনা।
    ২। প্লাস্টিড থাকে। ২। প্লাস্টিড থাকেনা।
    ৩। কোষগহ্বর সাধারণত বড় হয় এবং কোষের মধ্যবর্তী স্থানে পাওয়া যায়। ৩। সমস্ত কোষ জুড়ে ছোট ছোট কোষগহ্বর থাকে।
    ৪। সেন্ট্রিয়োল থাকেনা (ব্যতিক্রম:- কিছু নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদের কোষে সেন্ট্রিয়োল থাকে)। ৪। সকল প্রাণী কোষে সেন্ট্রিয়োল থাকে।
    ৫। লাইসোসোমের উপস্থিতি বিরল। ৫। প্রাণী কোষে সবসময় লাইসোসোম থাকে।
    ৬। গ্লাইঅক্সিসোম থাকে। ৬। গ্লাইঅক্সিসোম থাকেনা।
    ৭। প্লাজমোডেসমাটা থাকে। ৭। প্লাজমোডেসমাটা থাকেনা।
    ৮। সঞ্চিত খাদ্য- স্টার্চ। ৮। সঞ্চিত খাদ্য- গ্লাইকোজেন।
    ৯। ডেসমোজোম থাকেনা। ৯। ডেসমোজোম থাকে।
    ১০। প্রাণী কোষের প্রয়োজনীয় সকল অ্যামিনো এসিড, কো-এনজাইম এবং ভিটামিন সংশ্লেষণ করতে সক্ষম। ১০। নিজের জন্য প্রয়োজন সকল অ্যামিনো এসিড, কো-এনজাইম এবং ভিটামিন সংশ্লেষণ করতে সক্ষম না।
    ১১। কোষপ্রাচীরের উপস্থিতির কারণে হাইপোটনিক দ্রবণে কোষ বিদীর্ণ হয় না। ১১। যেহেতু কোষপ্রাচীর অনুপস্থিত তাই প্রাণীকোষ হাইপোটনিক দ্রবণে বিদীর্ণ হয়ে যায়।
    ১২। মাইক্রোভিলাই থাকেনা। ১২। কোষঝিল্লিতে মাইক্রোভিলাই থাকে।

     


    বছরজুড়ে অভিজ্ঞ টিচারদের সাথে ক্লাস 6-10 এর পড়াশোনা ও পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি নিতে আজই ভিজিট করো আমাদের অনলাইন ব্যাচ ২০২৫ -এ:


    বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে আমাদের কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে ক্লিক করুন:


    ১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে সরাসরি চলে যেতে পারো এই লিংকে: www.10minuteschool.com

    আপনার কমেন্ট লিখুন