তোমাকে যদি বলা হয় ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত গুণতে, তুমি নিশ্চয়ই বলবে ‘এটা কোন ব্যাপার হলো!’ নিমেষেই তুমি গুণে ফেলতে পারো ১ থেকে ১০০, আবার ১০০ থেকে ২০০, এমনকি ২০০ থেকে ২০০০ ও তোমার জন্য গুণে ফেলা সম্ভব। কিন্তু এই যে সংখ্যা গুণছো, এর শেষটা কোথায় বলতো? হ্যাঁ, বলবে অসীমে – ইনফিনিটিতে। এই ইনফিনিটি কি কেবল এই সংখ্যার শেষের সীমা? অনেক সময় সীমার মাঝে অসীমও কিন্তু থাকে, কীভাবে? ধরো, তোমাকে বলা হলো ১ থেকে ৫ পর্যন্ত কয়টি সংখ্যা আছে? চট করে বলে দিবে পাঁচটি! আসলে কি তাই? সংখ্যারেখার দিকে তাকালে দেখবে এই ১ থেকে ৫ এর মাঝে আছে অগণিত সংখ্যা, যা গুণে শেষ করতে পারবে না!
এই যে ‘অসীম’ বা ইনফিনিটি, এটা আসলে কী? সহজ করে যদি বলি “মানুষ এখনো যে সীমায় পৌঁছাতে পারেনি সেটাই অসীম।” ‘অসীম’ বলতে কিন্তু কোন সংখ্যা নির্দেশিত হয় না, এটা কেবলই একটা পরিমাণ। সে তো ভালো কথা, কিন্তু এই ইনফিনিটির পরিমাণটা কতটুকু? কত বড় এই ইনফিনিটি?
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
ভার্সিটি A Unit + গুচ্ছ এডমিশন কোর্স
দারুণ সব লেখা পড়তে ও নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ঘুরে এসো আমাদের ব্লগের পেইজ থেকে! The 10-Minute Blog!
ইনফিনিটি নিয়ে বিস্তর আলাপ-সালাপ করার আগে একটা কথা বলে নেই, আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে তোমার চিন্তা ক্ষমতার বেশ বড় একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে। তোমার চিন্তার গণ্ডিটাকে তুমি কতটুকু ভাঙতে পারো, তুমি কতখানি ভালোমতো চিন্তা করতে পারো সেটাই বোঝা যাবে এই লেখাটির শেষে। কী? ইন্টারেস্টিং লাগছে? দারুণ! তাহলে মাথাটা এখন একদম ঠাণ্ডা করে নাও, কেননা এখন আমরা প্রবেশ করব চিন্তা রাজ্যে- ‘হিলবার্ট এর ইনফিনিট হোটেলে’!
হিলবার্ট এর ইনফিনিটি হোটেল প্যারাডক্স:
নাম শুনেই হয়তো একটু ধারণা করতে পারছ যে ইনফিনিট হোটেল হলো এমন একটি হোটেল যেখানে ইনফিনিট সংখ্যক রুম আছে।
অসীমত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট একটি প্যারাডক্স (অবাস্তব মনে হলেও যা যৌক্তিক) তৈরি করেন, যাকে গ্র্যান্ড হোটেল প্যারাডক্স বা ইনফিনিট হোটেল প্যারাডক্স ও বলা হয়ে থাকে।
এই হোটেলের নাইট ম্যানেজার হল ‘জেফরি’। সে আবার একজন খুব ভালো গণিতবিদ!
এক রাতে জেফরির এই হোটেলের সবগুলো সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ। অর্থাৎ ইনফিনিটি সংখ্যক রুমের প্রতিটি রুমে ইনফিনিটি সংখ্যক গেস্টে পরিপূর্ণ। রাত বারোটার দিকে জেফরি দেখল হোটেলের সবকিছু ঠিকঠাক।
রাত যখন বারোটা পাঁচ তখন একজন নতুন অতিথি এসে জেফরিকে বলল তার একটা রুম লাগবে। কিন্তু হোটেলের সব রুমই তো পরিপূর্ণ! আবার এত রাতে একজন অতিথিকে কি ফিরিয়ে দেয়া ঠিক হবে? একটা রুমই তো লাগবে। আর জেফরি যেহেতু একজন ম্যাথমেটিশিয়ান,একটা উপায় সে বের করেই ফেলল।
জেফরি তখন প্রতিটি ঘরের মানুষ কে বলল তার পরের ঘরে চলে যেতে। অর্থাৎ ১ নং ঘরের মানুষটি যাবে ২ নং ঘরে, ২নং এর জন যাবে ৩ নং ঘরে, এমন করে n তম ঘরের মানুষ যাবে n+1 তম ঘরে।
ফলে প্রথম রুমটি কিন্তু খালি রইল আর সেই রুমে থাকবে এই নতুন অতিথি! কিন্তু প্রশ্ন হল হোটেলের শেষ রুমের মানুষটি তাহলে কোন রুমে যাবে? আরে, এটা তো ইনফিনিটি হোটেল, শেষ বলে কোন রুম এখানে নেই! কেননা n+1 এ যদি তুমি n এর বদলে ইনফিনিটি বসাও তাহলে ইনফিনিটি+1 = ইনফিনিটিই থাকে। যাক এ যাত্রায় জেফরি বেঁচে গেল, কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়নি।
চলে এলো ইনফিনিট অতিথি নিয়ে একটি ইনফিনিট দৈর্ঘ্যের বাস:
রাত যখন দুইটা তখন একটি বাস এল। সাধারণ কোন বাস নয়, ইনফিনিটি সংখ্যক সিটের একটি বাস, যাতে করে ইনফিনিট সংখ্যক অতিথি চলে এলো! জেফরি ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে শান্ত করে বলল যে, সে একজন তুখোড় গণিতবিদ তাকে তো জায়গা করতেই হবে। যেহেতু ইনফিনিটি সংখ্যক অতিথি চলে এলো তাহলে ইনফিনিটি সংখ্যক রুম খালি করতে হবে। জেফরি তখন নিজেকে বলল, ‘I have to create an Infinity inside an infinity’. কিন্তু কিভাবে? আইডিয়া! যেকোনো সংখ্যাকে (হোক তা জোর কিংবা বিজোড়) ২ দিয়ে গুণ দিলে সব সময় জোড় সংখ্যাই পাওয়া যায়। তাহলে n কে যদি ২ দিয়ে গুণ করা হয় তাহলে পাওয়া যাবে 2n, এখন যদি প্রতিটা ঘরের মানুষকে বলা হয় তারা যেন তাদের কক্ষের নম্বর এর সাথে ২ গুণ দিয়ে যে সংখ্যাটি পাবে সেই ঘরে চলে যায় তাহলেই কেল্লা ফতে!
নিজেই করে ফেল নিজের কর্পোরেট গ্রুমিং!
সুতরাং ১ নং ঘরের মানুষটি যাবে ২ নং ঘরে, ২ নং এর জন যাবে ৪নং এ, ৩ নং যাবে ৬নং। এমন করে n তম ঘরের জন চলে যাবে 2n তম ঘরে। এভাবে প্রতিটি জোড় সংখ্যক ঘর পূর্ণ হয়ে যাবে, আর বিজোড় সংখ্যক ঘর খালি হয়ে যাবে। আমরা এটাও জানি জোড় সংখ্যার সেট যেমন ইনফিনিটি (2, 4, 6, 8……) সংখ্যক ঠিক তেমনি বিজোড় সংখ্যার সেট ও ইনফিনিটি (1, 3, 5, 7….) সংখ্যক। তাই জেফরি ওই একটি বাসের নতুন ইনফিনিটি সংখ্যক অতিথিকে হোটেলের খালি হওয়া বিজোড় সংখ্যার ঘরগুলোতে যেতে বলল। ব্যাস, ঝামেলা শেষ! এখন ইনফিনিটির মাঝে ইনফিনিটি জায়গা তৈরি করতে পেরে জেফরি তো মহা খুশি! কিন্তু এই খুশি টিকলো না বেশিক্ষণ…
কোর্সটিতে শিক্ষার্থীরা পাবে:
ইঞ্জিনিয়ারিং এডমিশন কোর্স ২০২২
যখন এলো ইনফিনিট সংখ্যক বাস:
এতক্ষণ তো একটি বাসের ইনফিনিটি সংখ্যক যাত্রী নিয়ে হিমশিম খেলো জেফরি। কিন্তু রাত তিনটায় চলে এল ইনফিনিটি সংখ্যক বাস আর প্রত্যেকটিতেই ইনফিনিটি সংখ্যক যাত্রী আছে, এবার কী হবে? কী? মাথা এলোমেলো লাগছে? তোমার মত জেফরিরও তখন নাজেহাল অবস্থা! এমন সময় জেফিরর চোখ পড়ল তার টেবিলের ওপর রাখা মহান গণিতবিদ ইউক্লিডের ছবি।
ইউক্লিড প্রমাণ করে গেছেন যে, মৌলিক সংখ্যার ( যে সংখ্যাকে কেবল ১ ও সেই সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় যেমন ২,৩,৫,৭,১১,১৩….) সেট অসীম। ইউরেকা! এবার ইউক্লিড এর দেখানো পথে চলার পালা। জেফরি এবার বলল, ‘ I have to create infinity number of new infinities inside my infinity’.
আরও পড়ুন: রোবটিক্স -এ হাতেখড়ি: রোবট তৈরির গাইডলাইন
তাহলে এখন কাজটা কী?প্রথমে জেফরিকে একটা নতুন ইনফিনিটি তৈরি করতে হবে। সেই ইনফিনিটিতে একটা বাসের ইনফিনিট সংখ্যক অতিথিকে জায়গা দিতে হবে। এরপর আবার আরেকটা নতুন ইনফিনিট জায়গা তৈরি করতে হবে এবং তাতে আরেকটি বাস এর অতিথিদের জায়গা দিতে হবে। এমন করে ইনফিনিট বার এই একই কাজটা করতে হবে।
সুতরাং এবার যেটা করতে হবে সেটা হলো হোটেলে থাকা বর্তমান সব অতিথিদের সরাতে হবে, প্রথম মৌলিক সংখ্যা ২ এর ঘাত অনুযায়ী। অর্থাৎ, ২নং ঘরের অতিথি কে যেতে বলা হবে ২^২=৪ নং ঘরে, ৩ নং ঘরের জন যাবেন ২^৩=৮ নং ঘরে, ৪ নং ঘরের ব্যক্তি যাবেন ২^৪=১৬ নং ঘরে….২^৭= ১২৮ নং ঘরে। সুতরাং n নং ঘরের ব্যক্তির যাবেন ২^n ঘরে।
বাহ! এভাবে অসীম সংখ্যক ঘর খালি হয়ে যাবে! তারমানে হোটেলে অবস্থানরত সব অতিথি চলে যাবে পৃথিবীর প্রথম মৌলিক বা প্রাইম নাম্বার ২ এর ঘাত অনুযায়ী কক্ষে।
এবার আসি প্রথম ইনফিনিটি বাসের মানুষদেরকে কোথায় রাখবো। প্রথম বাসের অতিথিদের বলবো আপনারা পৃথিবীর দ্বিতীয় মৌলিক পূর্ণ সংখ্যা ৩ এর ঘাত অনুযায়ী কক্ষে যান। মানে? মানে বাসের ও তো একটা সিট নাম্বার আছে, তাই না? তাই ১ নং সিটের ব্যক্তিকে বলবো আপনি ৩^১=৩ নং রুমে যান (খেয়াল করে দেখো, ৩ নং ঘরটা কিন্তু আগে থেকেই খালি আছে। কেননা, ২ এর ঘাত করার সময় এই রুমের অতিথিটি ২^৩=৮ নং ঘরে চলে যান) । এবার, বাসের ২ নং সিটের ব্যক্তিকে বলা হবে ৩^২=৯ নং ঘরে যেতে। এমন করে ৩ নং সিটের জন যাবে ৩^৩=২৭ নং ঘরে, ৪ নং সিটের জন যাবেন ৩^৪=৮১ নং ঘরে…..৭ নং সিটের জন যাবেন ৩^৭=২১৮৭ নং ঘরে। এবং n নং এর জন যাবেন ৩^n নং ঘরে।
তুমি হয়তো বলতে পারো ৩^৭=২১৮৭ নং রুম তো খালি নেই। উহু, খালি আছে, কেননা ২ এর ঘাত করতে করতে একটা সময় ২১৮৭= ৩^৭ নং রুমটা খালি হয়ে গিয়েছিল। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, দু’টি মৌলিক সংখ্যার ঘাত কখনো এক পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ২^x ≠ ৩^y। যাইহোক, ৩ এর ঘাত কিন্তু তুমি ইনফিনিট সংখ্যক বার করতে পারবে। আর এভাবেই তুমি ৩ নং বাসটির সবার জন্য ইনফিনিটটি ঘর খালি করে দিতে পারবে।
এরকম করে ২ নং বাসের সবাইকে প্রাইম নাম্বার ৫ এর ঘাত করে হোটেল রুমে চলে যেতে বলা হবে,
৩ নং বাসের সবাইকে মৌলিক সংখ্যা ৭ এর ঘাত করে, ৪ নং বাসের সবাইকে ১১ এর ঘাত করে, ৫ নং বাসের সবাইকে মৌলিক সংখ্যা ১৩ এর ঘাত করে সেই সংখ্যার ঘরে যেতে বলা হবে।
ওয়াও! জেফরি খুশিতে আকাশে ভাসছে! কিন্তু হঠাৎ তার একটু আক্ষেপ হল। কেন? আচ্ছা তার আগে বল এই এক রাতেই জেফিরর ব্যবসা কেমন চলল? সে কত টাকা আয় করল?
ধরো, জেফরির বেতন হল প্রতি রুমের জন্য এক টাকা। একদম শুরুতে, মানে যখন নতুন কোন গেস্টই আসেনি তখন তো ইনফিনিট সংখ্যক ঘরের প্রতিটি পূর্ণ ছিল, তাহলে তখনই জেফরি আয় করেছিল ইনফিনিটি সংখ্যক টাকা। এরপর যখন ইনফিনিট সংখ্যক বাস এল তখন জেফরি প্রতি জনের কাছ থেকে আবারো এক টাকা করে পেয়ে পেয়ে ইনফিনিট সংখ্যক টাকা পেল।
তাহলে তার আগের ইনফিনিটি সংখ্যক টাকা আর এখনের ইনফিনিটি সংখ্যক টাকা মিলে কত হলো? হ্যাঁ, ইনফিনিট টাকায় থাকলো। কেননা,
ইনফিনিটি + ইনফিনিটি = ইনফিনিটি
তাই জেফরির একটু আক্ষেপ হল বৈকি, এই ভেবে যে, আগে তার যেই ইনফিনিটি টাকা ছিল, এত কষ্টের পরও তার কাছে সেই ইনফিনিট সংখ্যক টাকাই আছে, টাকা তো আর বাড়লো না!
কী? এলোমেলো লাগল নাকি একটানে সব বুঝে ফেলতে পেরেছ? জেফিরর মত তুমিও কি একটা ইনফিনিট হোটেলের ম্যানেজার হতে চাও?তাহলে কিন্তু টাকাই টাকা! নাকি এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো হবে তোমার কাছে? চাইলে কিন্তু কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারো তোমার উত্তরগুলো!
ছবি: TED-Ed
তথ্যসূত্র :
১.https://www.youtube.com/watch?v=Uj3_KqkI9Zo
২. https://youtu.be/WCqOkFY86pM
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: write@10minuteschool.com
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Web Design Course (by Fahim Murshed)
- Communication Masterclass Course by Tahsan Khan
- Facebook Marketing Course (by Ayman Sadiq and Sadman Sadik)
- Data Entry দিয়ে Freelancing Course (by Joyeta Banerjee)
- SEO Course for Beginners (by Md Faruk Khan)
আপনার কমেন্ট লিখুন