খুবই পুরনো একটি প্রশ্ন। ডিম আগে না মুরগী আগে? ডিম যদি আগে না আসে তাহলে মুরগী আসলো কোথা থেকে? আর যদি মুরগী আগে আসে, তাহলে সে কীভাবে আসলো? সে কথা থাক। আমাদের বিষয় অবশ্যই ডিম কিংবা মুরগী নিয়ে না। তবে প্রশ্নটা প্রায় একই রকম। এক্সপেরিয়েন্স আগে দরকার নাকি স্কিল আগে দরকার। এক্সপেরিয়েন্স ছাড়া কেউ কাজে নেয় না। আবার স্কিল না থাকলে কেউ কাজ দিতে চায় না। ব্যাপারটা আসলেই কি তাই?
এক্সপেরিয়েন্স এবং স্কিল শব্দ দুটিকে একটু ভেঙ্গে দেখা যাক। সহজ কথায় “এক্সপেরিয়েন্স” হলো কোনো নির্দিষ্ট কাজ আগে করার কিংবা পূর্বে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা। এর অর্থ এই না যে, তুমি কোনো কাজ ভালো পারো নাকি খারাপ পারো সেটা তোমার এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে যাচাই করা যাবে। বিপরীত দিকে “স্কিল” হলো কোনো নির্দিষ্ট কাজে তোমার পারদর্শিতা। এর দ্বারা সত্যিকার অর্থে বোঝা যায় তুমি কোনো কাজ কেমন করতে পারো বা সেই কাজে তোমার হাত কেমন। একটি উদাহরণ দেই। দুইজন প্রোগ্রামারের কথা চিন্তা করো। দুইজনেরই প্রোগ্রামিং এর অভিজ্ঞতা সমান। অর্থাৎ তারা একই সময় ধরে প্রোগ্রামিং করে আসছে। কিন্তু একজনের কোনো কোড ডেভলপ করতে সময় লাগে এক মাস এবং অপর জনের একই কোড ডেভলপিং এর জন্য সময় লাগে মোটামোটি এক সপ্তাহ। এখানে দুইজনেরই কাজ করার অভিজ্ঞতা সমান। কিন্তু একজনের এই কাজে দক্ষতা বেশি থাকায় তার সময় কম লাগছে এবং অপরজনের অনেক বেশি সময় লাগছে।
দারুণ সব লেখা পড়তে ও নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে
ঘুরে এসো আমাদের ব্লগের পেইজ থেকে! The 10-Minute Blog!
অর্থাৎ তোমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে মানে এই না যে, তোমার কাজের দক্ষতাও অনেক ভালো। স্কিল বা দক্ষতাকে আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়। কোনো কাজ তুমি পারো ঠিক আছে। কিন্তু কাজটি কতটুকু পারো, ভালো পারো নাকি খারাপ পারো সেটিই হলো তোমার দক্ষতা।
এবার আসি মূল কথায়। কোনো চাকরির জন্য আবেদন করার সময় সার্কুলারে লেখা থাকে যে, এই ধরণের কাজে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। এখন একজন ফ্রেশারের পক্ষে তো আর হঠাৎ করে ৩ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা নেয়া সম্ভব না। আসলে যারা চাকরি দেয়, তারা চায় না কোনো ঝুঁকি নিতে। অফিসের কাজ করার জন্য একজন কর্মচারীকে তারা ভাড়া করবে কিন্তু তার যদি কাজের ধরণ ভালো না হয়, তাহলে তারা নিজেরাই তখন ঝামেলায় পড়বে। বাধ্য হবে সেই কর্মচারীকে বাদ দিয়ে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার। এখন কথা হলো, তোমার কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই ঠিক আছে। কিন্তু তোমার কাজের হাত অনেক ভালো। তোমার কাজ করার অনেক দক্ষতা আছে। তবুও তোমার আগে তারা বেশি অগ্রাধিকার পাবে যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা তোমার থেকে বেশি। কেনো?
কর্পোরেট জগতে কাজ করার জন্য প্রত্যেকেরই কিছু গুণাবলী থাকা লাগে। এসকল গুণাবলী যাদের মাঝে আছে, তাদেরকেই সব জায়গায় অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে। চাকরিদাতারা আসলে এদেরকেই চায়। তাহলে কী এমন গুণাবলী যেগুলো একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাক্তির মাঝে আছে কিন্তু তোমার মাঝে নেই?
দলগতভাবে কাজ করা – তুমি হয়তো বলবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দলগত কাজ করেছো। অনেক অ্যাসাইনমেন্ট দলগত ভাবে শেষ করেছো। কিন্তু কাজের বেলায় ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। এখানে কেবল পড়ালেখার ব্যাপারটাই প্রাধান্য পায় না। বরং এটি পুরো কাজের মাঝে ছোট একটি অংশ মাত্র। তাই নতুন যাদের সাথে মিলে কাজ করতে যাচ্ছো, তাদের মানসিকতা বুঝতে পারা, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এসবকিছুর উপর নির্ভর করছে নতুন পরিবেশে তুমি কতোটা সফল হবে।
সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সমস্যা সমাধানের গুণাবলী – অফিসে সবার সাথে কাজ করার সময় মাঝে মধ্যে নিজেকে কোনো কাজে নেতৃত্ব প্রদান করতে হয়। তখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া এবং কাজের মাঝে কোনো সমস্যায় পড়লে তা সমাধানের রাস্তা খোঁজার মতো গুণাবলী থাকা জরুরি।
সকলের সাথে মৌখিক যোগাযোগের গুণাবলী – অনেকেরই এই সমস্যা দেখা যায় যে, কারো সাথে কথা বলতে গেলে অস্বস্তিতে ভোগে। অর্থাৎ অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে তেমন একটা অভ্যস্ত না। কর্পোরেট জগতে ঢুকতে গেলে এই সমস্যা কাটানো খুবই জরুরি। এখানে অফিসে নতুন বন্ধুদের সাথে কথা বলে মানিয়ে নিতে হয়। আবার প্রতিদিনকার কাজের প্রয়োজনে অফিসের বাহিরে অনেকের সাথে কথা বলতে হয়। আবার কাজের জন্য কেউ সাহায্য চাইতে আসলে তার সাথেও ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়।
নিজেই করে ফেল নিজের কর্পোরেট গ্রুমিং!
জেনে নাও বিতর্কের এদিক-সেদিক!
মত, মতাদর্শ আর আদর্শবাদ গঠনের জন্যই বিতর্ক। বিতর্ক করতে ভালোবাসি আমরা সবাই। কিন্তু সঠিক নিয়মে বিতর্ক করার উপায় জানি কি? উপায় জানতে হলে ঘুরে এসো ১০ মিনিট স্কুলের এই প্লে-লিস্টটি থেকে!কাজের পরিকল্পনা করা এবং কাজ সাজানোর গুণাবলী – কোনো কাজ একদম গোড়া থেকে শুরু করতে গেলে, একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়া জরুরি। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজিয়ে নিয়ে কাজ না আগালে দিন শেষে সব কাজই পণ্ড হয়ে যায়। তাই হাতে কোনো কাজ থাকলে তা কীভাবে করবো, কাজের কোন অংশ আগে করবো এবং দলে কে কোন কাজ করবে এগুলো সব আগে থেকে ঠিক করে নিতে হয়। তা না হলে কাজ আগানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
তথ্য যাচাই – বাছাই করার গুণাবলী – অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কাজ করতে গেলে বাহিরের লোকের সাহায্য নেয়ার দরকার পড়ে। তখন কাজের একটি বড় অংশ অপরিচিত মানুষজনের হাতে ছেড়ে দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে যাদের উপর কাজ ছেড়ে দিচ্ছো, তারা কাজ কেমন পারে বা তাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন এসব তথ্য খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে হয়। তাই কর্পোরেট জগতে কাজ করার সময় এরকম নানা তথ্যের ব্যাপারেও খোঁজ নিতে হয়।
কেবলমাত্র পড়ালেখা করে গেলেই কিন্তু এসকল গুণ অর্জন করা যায় না। পড়ালেখার পাশাপাশি আরও অনেক কাজ করা উচিত যা তোমার কাজ করার স্কিল এবং এক্সপেরিয়েন্স দুটোই বাড়াতে সাহায্য করবে। চাকরি দেয়ার সময় চাকরিদাতারা চিন্তা করে, যাকে সে কাজ দিচ্ছে তার মধ্যে এসকল গুণাবলী আছে কি না। যাদের মধ্যে এসকল গুণাবলী আছে, তাদের দ্বারাই আসলে কাজ হাসিল করিয়ে নেয়া সম্ভব। Hire for Attitude বইয়ের লেখক মার্ক মারফি বলেন, নতুন কাজে যোগ দিয়েছে এমন সদস্যদের মাঝে ৪৬ শতাংশ তাদের কাজে সফল হতে ব্যর্থ হয় প্রথম ১৮ মাসের মধ্যে। আর এই ৪৬ শতাংশের ব্যর্থ হবার পিছনে শতকরা ৮৯ ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করে তাদের মনোভাব। “কেনো অন্যের কথা মতো আমাকে চলতে হবে?”, “কেনো ওর কাজের অংশ আমার করা লাগবে?”, “সিনিয়র বলেই তার সব কথা আমার শুনতে হবে নাকি?” এরকম নানা মনোভাব কাজ করে নতুনদের মাঝে। দিন শেষে এগুলোই কাল হয়ে দাঁড়ায় নতুনদের কাজ চলে যাবার পিছনে। চাকরিদাতারা চায় না নতুনদের কাজে নেওয়ার মতো রিস্ক নিতে।
এখন প্রশ্ন হলো সবাই যদি এক্সপেরিয়েন্সের উপর এতো গুরুত্ব দেয়, তাহলে এতো বছর পড়াশোনা করে, এতো স্কিল অর্জন করে লাভটা হলো কী? কাজ করার এক্সপেরিয়েন্স আমি ছাত্র অবস্থায় অর্জন করবোই বা কীভাবে? এই বয়সে তো আমার একমাত্র ধ্যান হলো পড়াশোনা। ধারণাটি আসলে ভুল। ছাত্রজীবনে অনেক সুযোগ আছে নিজের কাজ করার স্কিল বাড়ানোর পাশাপাশি নানা কাজে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করার। কিন্তু কীভাবে?
এক্সপেরিয়েন্স বাড়াতে ক্লাবিং করো –
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমি অনেক সুযোগ পাবে ক্লাবিং করার জন্য। নিজের পছন্দমতো যেকোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে যাও। প্রতিবছর ক্লাবের থেকে যেসকল অনুষ্ঠান কিংবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, সেগুলোতে সক্রিয় থেকে কাজ করো। এগুলো একদিকে তোমার কাজের স্কিল বাড়াতে সাহায্য করবে, অপরদিকে বিভিন্ন মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করার অভিজ্ঞতাও দিবে।
সমাজসেবামূলক সংগঠনের অংশ হও –
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিকও অনেকগুলো সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তুমি চাইলেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যুক্ত হয়ে যেতে পারো। এতে তোমার কাজ করার দক্ষতার পাশাপাশি বাড়বে কাজ করার অভিজ্ঞতাও। কারণ এখানে প্রতিনিয়ত নানা ধরণের মানুষের সাথে মিলে কাজ করতে হয়।
ইন্টার্নশিপ করো –
কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য এটি হলো সবচেয়ে মোক্ষম উপায়। তুমি কোনদিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাও তার উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে যাও। সেখানে কাজ করতে পারলে কর্মজগতের বাস্তব চিত্রের ব্যাপারে একটি ধারণা পাবে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সামান্য অর্থের বিনিময়ে অথবা অনেকক্ষেত্রে প্রায় বিনামূল্যেই শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে অর্থের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করা। কারণ এসকল অভিজ্ঞতার গুণেই তুমি পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পেতে পারো।
অর্থাৎ পড়ালেখার পাশাপাশি তোমার অনেক সুযোগ আছে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের। তবে এটা খেয়াল রেখো যে, কাজ করার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কাজ করার দক্ষতাও থাকা চাই। অনেকেই ছাত্রজীবনে একাধিক ক্লাব কিংবা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকে। কিন্তু দিনশেষে কোনো জায়গাতেই তার পক্ষে সময় দেয়া সম্ভব হয় না। এমনটা করলে কাজের দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা কোনটিই তৈরি হবে না। অর্থাৎ অন্য সবকিছুর মতো তোমার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দুটোরই একটি ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। একথা মনে রাখতে হবে যে, কাজের দক্ষতা দিয়ে তুমি চাইলে তোমার চেয়ে বয়সে বড় এমন কাউকে টপকে যাওয়া অসম্ভব কিছু না।
রেফারেন্স –
- https://www.quora.com/What-is-the-difference-between-a-skilled-and-an-experienced-person-Are-skills-the-certifications-Is-one-dependent-upon-or-related-to-the-other
- https://www.manager-tools.com/forums/experience-vs-skills-whats-more-valuable
- https://www.hrbartender.com/2013/recruiting/the-difference-between-knowledge-skills-and-abilities/
- https://www.linkedin.com/pulse/skills-vs-experience-successfully-hiring-2018-w-coby-milne/
- https://partnersinexcellenceblog.com/are-skills-more-important-than-experience/
১০ মিনিট স্কুলের ব্লগের জন্য কোনো লেখা পাঠাতে চাইলে, সরাসরি তোমার লেখাটি ই-মেইল কর এই ঠিকানায়: [email protected]