আমাকে প্রায়ই অনেকে এসে বলে যে, তারা জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছে না। চরম হতাশায় তলিয়ে যাচ্ছে তারা, প্রযুক্তিঘেরা এই জীবন অতিষ্ঠ লাগছে তাদের। না পারছে পরিবারকে খুশি করতে, না পারছে নিজে মন থেকে খুশি হতে।
এই হতাশ প্রজন্মকে আমি একটা কথাই বলি। কোন না কোন কাজ করো, নিজেকে ব্যস্ত রাখো। দেখবে আর তোমার হতাশ লাগছে না! হতাশা কাটিয়ে সুনাগরিক এবং সুস্থ প্রজন্মের একটি অংশ হবার সূত্রগুলো শুনে নাও তাহলে।
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Communication Masterclass by Tahsan Khan
একজন আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্যঃ
স্বাবলম্বী হও:
বাবা-মা তোমাকে ভরণ-পোষণ করে অনেক বড় করেছেন, আর কত? নিজেই অর্থ উপার্জন শুরু করে দাও। আমার পরিচিত এক বন্ধু আছে, সে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমার বন্ধুটি পণ করেছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল টিউশন ফি এর পুরোটাই সে নিজে বহন করবে।
হ্যাঁ, এটি করার জন্যে তাকে রাত-দিন খাটতে হচ্ছে, কিন্তু সে সুখী! পরিবারের বোঝা আর মনে হচ্ছে না নিজেকে! তোমাদের ক্ষেত্রেও একই। কাজ করতে সবাই জানে, শুধু সেক্টরটা বিচিত্র। তাই এখন থেকেই শুরু করো অর্থ উপার্জন করা। প্রশ্ন আসে, কিন্তু সেটা কীভাবে করবো? এর উপায় রয়েছে অনেকগুলো!
১। টিউশনি:
টিউশনিকে বলা যায় ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জনের অতি প্রাচীন ও কার্যকর একটি পদ্ধতি। টিউশনি করাটাও বেশ মজাদার, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে যায়! কাউকে পড়ালে কিন্তু একইসাথে শেখানো এবং নিজেরও নতুন নতুন অনেক কিছু শেখা হয়ে যায়।
২। ভলান্টিয়ারিং/ইন্টার্নশিপ/পার্ট টাইম চাকরি:
বড় বড় কোম্পানি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায়ই ইন্টার্নশিপের জন্যে ডাক দেয়। এখানে কাজ করতে তোমার টাকার থেকে মূল্যবান একটি ব্যাপার হবে, তুমি অভিজ্ঞতা পাবে। আবার অনেকখানে পার্ট টাইম চাকুরি করা যায়, সেখানে আবার টাকাও মেলে! আবার অনেক ইভেন্টে ভলান্টিয়ার হবার জন্যে ডাকে, এটিও তোমার অশেষ কাজে লাগবে।
৩। ফটোগ্রাফি:
ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, ইভেন্ট ফটোগ্রাফি- আরো কত কি! বর্তমানে ফটোগ্রাফিকে বলা চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা একটি পেশা। তোমার ছবি তোলার হাত ভালো? যেকোন ধরণের ফটোগ্রাফি শুরু করে দাও! হ্যাঁ, শুরুর দিকে এগুলো ভালো হবে না, কিন্তু ধীরে ধীরে স-ব শিখে ফেলবে তুমি!
নিজের প্রতিভাকে খুঁজে নাও, আর সে অনুপাতে এগিয়ে যাও।
হ্যাঁ, এসব করতে গেলে অনেক পরিশ্রম হয়, হতাশায় ভেঙ্গে পড়তে হয় অনেক সময়ই। কিন্তু ভাবো একটিবার, তুমি যদি নিজের উপার্জিত টাকায় নিজের ভরণ-পোষণ করতে পারো, পাশাপাশি বাবা-মা এর জন্যেও কিছু খরচ করতে পারো, কতোটা অসাধারণ লাগবে না? নিজেকে নিজের কাছেই গর্বিত মনে হবে।
নিজেকে সময় দাও:
অনেককেই দেখেছি বলতে, যে তার নাকি কোন গুণ নেই, সে নাকি কোনকিছুই পারে না! কথাটা মোটেও সত্যি নয়। প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু গুণ রয়েছে, সে এগুলো এখনো খুঁজে পায় নি, এই আর কি। তুমি যদি সত্যিও কোন কিছুতেই ভালো না হও, তাহলে চেষ্টা করো ভালো হবার!
ওয়াল্ট ডিজনির নাম আমরা সবাই জানি। এই কিংবদন্তীতুল্য মানুষটিকে বলা হয়েছিল তাঁর নাকি সৃজনশীলতা নেই! অপরাহ উইনফ্রে, যাকে বলা হয় বর্তমান যুগের সবথেকে জনপ্রিয় তারকাদের একজন, তাকে একসময় শুনতে হয়েছে “অপরাহ টিভি ম্যাটেরিয়াল না!” তাঁরা কিন্তু ভেঙ্গে পড়েন নি। তারা নিজেকে সময় দিয়েছেন, আর ফলাফল তো চোখের সামনেই!
আরও পড়ুন:
ওয়ার্ডপ্রেস কী? ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন যেভাবে
লোগো ডিজাইন কীভাবে করে? জেনে নিন ১০টি সেরা লোগো ডিজাইনিং টিপস
নিজের প্রতিভাকে চিহ্নিত করো:
তোমার অনেক কিছুতেই প্রতিভা থাকতে পারে। তুমি সেটা জানো না, নিজের মধ্যে গোপন রেখে দিয়েছো। তাতে কি কোন লাভ হচ্ছে? হচ্ছে না। তাই নিজের প্রতিভাকে নিজেই খুঁজে নাও। আমার ভাই একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তার এই প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সে তিন তিনটা পার্ট টাইম চাকুরি বাগিয়ে নিয়েছে! এবার তোমার পালা। নিজের প্রতিভা খুঁজতে কয়েকটা কাজ করে দেখতে পারো:
১। Debate:
ছোটবেলা থেকেই নাম শুনে এসেছো ডিবেট বা বিতর্কের। হয়তো একটু-আধটু করেছোও, কিন্তু কাজের কাজ হয় নি। এখন নতুন করে শুরু করে ফেলো এটি। দেখো তোমার বুদ্ধির নখে শান দেয়া হলো কি না, কথা বলার স্কিল বাড়লো কি না!
২। Model United Nations:
বিতর্কের মত MUN হলো আরেকটি জনপ্রিয় কম্পিটিশন, যেখানে বুদ্ধিবৃত্তির বিন্যাসের পাশাপাশি কথা বলার স্কিলটির বিশদ পরিবর্তন হয়!
কোর্সটি করে যা শিখবেন:
Microsoft Office 3 in 1 Bundle
৩। Business Competitions:
শুধু বিবিএ এর শিক্ষার্থীরা নয়, অন্যান্য ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরাও ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠছে এই বিজনেস কম্পিটিশনগুলোতে। একটি কম্পিটিশনেই তোমার কথা বলা, উপস্থিত বুদ্ধি থেকে শুরু করে রসবোধ- সবকিছুরই উন্নতি হয় এগুলোতে।
৪। Clubbing:
তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চয়ই বিভিন্ন রকম ক্লাব আছে? তুমি এক কাজ করো, পছন্দমতো যেকোন একটা ক্লাবে জয়েন করো, তারপর ক্লাবের হয়ে কাজ করতে থাকো। হয়তো দেখা গেলো ইভেন্ট করার দরকার কোন, তুমি একাই নামিয়ে ফেললে পুরো প্রোগ্রামটি!
নিজের প্রতিভাকে খুঁজে নাও, আর সে অনুপাতে এগিয়ে যাও। সাফল্য আসবেই!
অগ্রজদের কাছ থেকে পরামর্শ নাও:
তোমার থেকে তোমার অগ্রজ বা সিনিয়ররা অনেক বেশি জানেন, বোঝেন। তাই যেকোন সমস্যায় চেষ্টা করবে তোমার অগ্রজদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে। এই পরামর্শই পরে মহা কাজের হয়ে উঠতে পারে! যেকোন সুযোগ খুঁজে পেলে সেটিকে কাজে লাগাও, আর সুযোগ পেতে হলে সেটিকে সিনিয়রদের কাছ থেকেই পাওয়া যেতে পারে!
সবাই মিলে আইডিয়া বাস্তবায়ন করো:
আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা বদ অভ্যাস রয়েছে। সেটি হলো, মানুষকে নিয়ে কথা বলা। আমরা মানুষকে নিয়ে কথা বলতে খুব বেশি পছন্দ করি। এই অভ্যাসটাকে তো আসলে সহজে পালটানো যায় না, তবে এই অভ্যাসকে রেখেই আরেকটি ভালো অভ্যাস করে ফেলা যায়। নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করে দেখি না!
তোমাদের অনেকের হয়ত ইউটিউবার হবার অনেক আগ্রহ। কিন্তু মানুষ পাচ্ছো না। সমমনা মানুষ খুঁজতে থাকো। কাউকে না পেলে একাই চেষ্টা করতে থাকো, তারপরেও নিজের আইডিয়াটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় থাকো। মানুষকে নিয়ে কথা না বলে নিজের আইডিয়া নিয়ে কথা বলো, দেখবে দুনিয়াটা কি সুন্দর হয়ে গেছে!
একবার ভেবে দেখো তো, প্রতিদিন আশেপাশের প্রতিটি মানুষ যদি এক ঘণ্টা করে নিজের আইডিয়া আর স্বপ্নগুলো নিয়ে কথা বলে, কি অসাধারণ হবে না বিষয়টা? সুন্দর একটা পৃথিবী হবে, যেখানে দ্বেষ-হিংসার জায়গা নেবে আইডিয়া আর স্বপ্ন। এ আশাই আমাদের সবার কাম্য।
এই লেখাটি লিখতে সহায়তা করেছে অভিক রেহমান।
আমাদের কোর্সগুলোর তালিকা:
- Adobe Illustrator Course (by Mohammad Yeasir)
- Graphic Designing with Photoshop Course (by Sadman Sadik)
- Graphic Designing with PowerPoint Course (by Anisha Saiyara Taznoor)
- মোবাইল দিয়ে Graphic Designing Course (by Sadman Sadik)
- Facebook Ads Mastery Course (by Mark Anupom Mollick)
১০ মিনিট স্কুলের ক্লাসগুলো অনুসরণ করতে ভিজিট করুন: www.10minuteschool.com
আপনার কমেন্ট লিখুন